কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম রাহিতের আবেগঘন স্ট্যাটাস


admin প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১, ২০২০, ৫:৫৭ অপরাহ্ন / ১৭৪
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম রাহিতের আবেগঘন স্ট্যাটাস

ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন, বিশেষ প্রতিনিধিঃঃ ছবিটি মনে হয় ২০১১ সালের হবে, তৎকালীন সময়ের রাজপথের অামার তেমন কোন স্মৃতি নাই কারণ সে সময়ে এসব ছবিতবি কখনো প্রয়োজন মনে করতামনা,

আজ হঠাৎ ছবিটি পেলাম, তাও ছবিটা আজ পাব কল্পনার বাইরে ছিল।

অামার গর্বধারিণী “মা” জননী জরাজীর্ণ ছেড়া/ফাটা ছবিখানা যে এভাবে যত্ন করে রেখে দিবে অামি ভাবতেও পারিনি সত্যি😴 মা কে বললাম অামার সার্টিফিকেট এর ফাইলটা দিন,

অামার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ লাগবে, মা দিলেন, ফাইলের ভেতরে সামনেই ছেঁড়া/ফাটা ছবিখানা দেখতে পেলাম, কোনকিছু জিজ্ঞেস না করতেই মা বলেন দেখ এটা তুই যে রাজনীতি করিস তার ছবি, অামি এটা সেই এগারো সালেই তুর খাটের নিচে পেয়ে যত্ন করে রেখে দিছি।
অামি ত পুরাই অবাক! 😮কারণ রাজপথের মিছিল মিটিংয়ের কখনো কোন ছবি যে কাউকে দেখিয়ে সুবিধা নিতে হবে বা ফায়দা নিতে হবে তার অাশায় রাজনীতি করতামনা,তাই কখনো প্রয়োজনও করতামনা।

২০০৭ সালের মাঝামাঝি ছাত্ররাজনীতিতে অামার হাতেখড়ি, যাত্রা শুরু হয়। সে সময়ে সম্ভবত দেশের শাসনামল তত্বাবদায়ক সরকার ছিল।
শুরুতেই প্রায় দেড় বছর পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে খুব অসহ্য কষ্ট পেয়ে রাজনীতি করতে হয়েছিল এই অামাকে,

বাবা একজন সরকারী বাহিনীর চাকরিজীবী ছিলেন তাই রাজনীতি পছন্দ করতেননা, অনেক শাসন-বারন করার পরেও অামাকে অামার পরিবার রাজনীতির নেশা থেকে ফিরিয়ে অানতে অসক্ষম হয়। পরে অনেক ইতিহাস! এমনকি প্রায় দুবছর বাবার নিষেধ ছিল অামি বাড়ির বাইরে ছিলাম, দুইবছরের দুই ঈদেও বাসায় যেতে পারিনি, ঈদে বাবাকে সালামও করতে পারিনি, বাবার ভয়ে রাতের অাধারে গিয়ে মা কে সালাম করেছি। এসবের কারণ একটাই অাব্বু অামাকে রাজনীতি ছাড়াবেই।

অাব্বুর সরকারী চাকরির সুবাদে অাব্বুকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন জেলাতে পোস্টিং হত সেখান থেকে অামার জন্য খুব টেনশন করত, বাসায় শুদু ফোনদিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন মাকে বা অামার অাত্মীয়স্বজনকে অামার ছেলেটা কোথায়! কি করতেছে সে! এরকম। বলতেন দেশের পরিস্থিতি ভালো নয় সে এখনো ছোট তাই অবুঝ, অামার অাত্মীয়স্বজনদের বলতেন তুমরা একটু অামার ছেলেটাকে বুঝাও রাজনীতি ভালোনা, রাজনীতিতে প্রতিহিংসা অার মারামারি ছাড়া কিছুই নেই, অারোও কত কি, অামাকেও সবাই যে যেখানে পেতেন বুঝাতেন কাজ হতো না অার কি।

শেষমেষ অাব্বু অামাকে অাব্বুর ক্যাম্পে বেড়াতে নিয়ে যাবে বলে ২০১২ সালে কয়েকটা ট্রেনিং করায়, সশস্র বাহিনীর। সবকটার সার্টিফিকেটও অাব্বুর কাছে অাছে এখনো। অাব্বু তার সিনিয়র এক মেজরকে বলে চাকরিও ঠিকটাক করে দিয়েছিল। বাসায় বেড়াতে অাসবো বলে ছুটিতে অাসছি, এই রাজনীতির নেশা অামায় পিছু ছাড়েনি, অাব্বুর অজান্তে সাংগঠনিক দায়িত্ব নিলাম নিজ ওয়ার্ডে, তারপর পৌরসভায়, এভাবে এভাবে হয়ে গেলাম রাজনীতির মাঠে অামি তারেক😣

অাপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, অামার সহজ সরল অাব্বু টার ঐ অমলিন মায়ামাখা হতাশাভরা চেহারার দিকে অাজও একটু ভালো করে থাকাতে পারিনা কারণ অামার সেই অধিকারটুকু নাই। তার কোন ইচ্ছাই পূরণ করতে পারিনি তাই😭

কতশত মামলা, হামলা নির্যাতন সহ্য করে করে অাজ এইটুকুতে অাছি, অালহামদুলিল্লাহ, যদিও অামার মূল্যায়ন রাজনীতির মাঠে কোথাও হয়নি।
ছাত্ররাজনীতির চর্চা করতে করতে অাজ সুদীর্ঘ একযুগ সাতমাস,

কিছুই দেয়নি রাজনীতি অামাকে, বরং অামার সহজ সরল গোছালো জীবনটা বরবাদ করেদিয়েছে।
যে বয়সে একটা ছেলে পড়ালেখা প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজেকে পরিপূর্ণ করে সে বয়সটার পুরোটাই অামি নষ্ট করেছি এই স্বার্থপর ও ভয়ানক নিষ্টুর রাজনীতির পিছনেই।

না পেরেছি একটা একাউন্ট করে টাকা পয়সা জমাতে!
না পেরেছি রাজনীতির মাঠে নিজে উচ্চপর্যায়ে যেতে!

এই হল অামাদের মত মনপ্রাণ দিয়ে রাজনীতি করা ফাল্তু ছেলেদের পরিণতি।

একদিকে যেমন অহংকার করি অামি পিতামুজিব/দেশরত্নের নীতিঅাদর্শের কর্মী

অাপরদিকে বিভীষিকাময় রাজনীতি নামক এই নোংরা রংবেরঙের লীলাখেলাকে।

রাজনীতিতে একটাই শুধু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এখানে বঙ্গবন্ধুর কণ্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা একজন ছাড়া বাকিরা সবাই স্বার্থপর।

বর্তমান সময়ের রাজনীতি কাউয়া বাহিনীদের দখলে চলে গেছে, অামার মত অজস্র নেতাকর্মী অাছে যারা মুখফুটে এসব শেয়ার করতে পারেনা।

অামার ছাত্র রাজনীতির এই সুদীর্ঘ ১২ বছরে অামার পরিবারের নিজের জানামতে প্রায় ১৮/১৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছি।
অনেক সময় অনেক সিনিয়র নেতারা কমিটির প্রলোভন দেখিয়ে বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়েছে যেগুলোর কোন হিসেব নাই। কিন্ত কোন কিছুই পায়নি।
অপদস্ত হয়েছি বারবার।

প্রশ্ন অাসতে পারে সকলের মাঝে টাকা গুলো কোথায় পেয়েছি। যদি কারো জানার প্রয়োজন হয় তাহলে একদম খাটিভাবে গোয়েন্দা লাগান, নিশ্চিত জেনে যাবেন। অাল্লাহ এক, অাল্লাহকে সাক্ষী করেই বলেছি অামার অায় ছিলনা, অবৈধ কোন ব্যবসা বানিজ্যও ছিলনা। কখনো মামাদের কাছ থেকে, কখনো বাবার কাছ থেকে এভাবেই নিয়ে নিয়ে রাজনীতি নামক নোংরা খেলায় ঢেলে দিয়েছি।

এই সময়ে এসে অামার ভবিষ্যৎ নিয়ে অাজ নিজেই শঙ্কিত অাছি,
রাজনীতির মাঠে অামার একটাই দোষ একমাত্র নেত্রী ছাড়া অার কোন নেতাকে তেল মারতে পারিনা।
কারণ অামার নীতি ভিন্ন, অপশক্তি যতই শক্তিশালী হউক মাথা নত করিনা, কারণ অামার রাজনীতির অাদর্শে জাতির পিতার অাদর্শ মিশ্রিত অাছে।

অামিই প্রমাণিত – রাজনীতিতে অতি ত্যাগী, অতি উৎসাহী, অতি পরিশ্রমী, অতি বিপ্লবীদের কোন মূল্যায়ন হয়না।

জানিনা অামাদের মত কর্মীদের ভবিষ্যৎ কি, কোথায় অামার গন্তব্য? উত্তরটা জানা থাকলে বলবেন।
এসবের কোন রাস্তাও খুঁজে পাইনা।

খুব হিমশিম অবস্থায় সময় গুলো অামার যাচ্ছে কেটে।

দল অাজ তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় চলমান, সবস্থানে স্থানীয়পর্যায়ের সকল সুবিধাবাদী বড়মাপের নেতারা টাকা পয়সা ইনকাম নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে বৈধ বলেন অবৈধভাবে বলেন অায় করে নিয়েছে।

দিনশেষে অামাদের মত কর্মীরা শূন্য বুকপকেটে একবুক হতাশায় বাসায় ফিরে অার নির্ঘুম রজনীভরা নিশ্চুপে চাপাকান্না করে,

পড়ালেখা করে তিন চারটা সার্টিফিকেট অর্জন করে কোথাও একটা চাকরিও পাবো না অার, কে দিব?