ক্রাইম ডেস্কঃ হত্যাকাণ্ডের ৫৩ দিন পাড় হতে চলেছে। হয়েছে লাশের ময়না তদন্ত। জানাজা শেষে দাফনও সম্পন্ন হয়েছে। এলাকাব্যাপী এখনো রয়েছে শুনশান নীরবতা। পরিবারে চলছে চূড়ান্ত রকমের শোকাবহ পরিবেশ।
১১ মাসের ফুটফুটে শিশুসহ তিনজন সন্তানেরই চোখ খুঁজে বেরায় তাদের নিহত হওয়া বাবাকে। ছেলে নিহত হওয়ার পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রীতিমত পাগল হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ মা। স্বামী হারিয়ে বার বারই মূর্চা যাচ্ছেন প্রিয়তমা স্ত্রী। ভাই দু’জনও অভিভাবক হারিয়ে শোকে কাতর।
এমন হৃদয় বিদারক ঘটনায় হতভম্ব স্থানীয় এলাকাবাসীও। অবুঝ শিশু তিনজনের প্রশ্ন- এখন থেকে কাকে বাবা ডাকবেন তারা? এমন প্রশ্নে রীতিমতো বাকরুদ্ধ করে তুলছে সবাইকে!
ঘটনা সম্পর্কে জানতে এ প্রতিবেদক মঙ্গলবার উপস্থিত হন দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দরগাপাশা ইউনিয়নের কাবিলাখাই (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে নিহত তাজ মিয়া (৩৫)’র বাড়িতে। তখন টিনশেডের ঘরের মাটির বারান্দায় বসে খেলছিলেন তাজ মিয়ার ৪ বছরের মেঝো ছেলে রেদুয়ান আহমেদ। ৬ বছরের বড় শিশু আরিয়ান আহমদের কোলে ১১ মাসের শিশু সন্তান রাইয়া আহমদ।
বাবা সম্পর্কে জানতে চাইলে কেঁদে উঠেন বড় ছেলে আরিয়ান। বলেন, ‘আমরা এখন কারে আব্বা ডাকতাম? কে আমরার লাগি পয়েন্ট থাকি বিস্কুট লইয়া আইবা? কে আমরারে জুম্মার নামাজো লইয়া যাইবা?
মূহুর্তেই নীরব হয়ে উঠে পরিবেশ। পাশের ঘর থেকে ভেসে আসে সদ্য বিধবা স্ত্রীর কান্নার শব্দ। লোক সমাগম দেখে পাগলপ্রায় মা বলেন, তোমরা কেনে আইছো? আমার এক ছেলেরে খাইছো, আরেকজনরে খাইতায় আইছো? বলেই পাগলের মতো অস্বাভাবিক আচরণ করেন তিনি
বড় ভাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে খালেদ আহমদ বলেন, ‘আমার ভাই আমাদের অভিভাবক ছিলেন। তিনিই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ডোবায় মাছধরার ছাই পাতানোর মতো ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে রুহুল আমীন, কামরুজ্জামান, নুরুজ্জামান ও আনছার মিয়া মিলে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তারা এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটিয়েছে। আমার ছোট ছোট ভাতিজাদের এতিম করে ফেলেছে উগ্র মেজাজের এ চার ঘাতক। আমরা এদের
ফাঁসি চাই।
কাবিলাখাই গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাজ মিয়া একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারা চারজনই চলাফেরায় উগ্র ছিলেন। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে এর আগেও একাধিক মানুষের সাথে তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে এলাকাবাসীও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের দাবি করেন।
কাবিলাখাই গ্রামের শালিস ব্যক্তিত্ব গয়াছ মিয়া ও ৭নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন সদস্য নূর মিয়া বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আগেও ‘উগ্রতা’ভাব দেখা যেতো। একাধিকবার ঝগড়াঝাঁটি করেছে তারা৷ মাছ ধরা প্রায়ই অন্য জেলেদের সাথে বাকবিতণ্ডা হতো। তবে তারাই যে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত তা আমরা সঠিকভাবে বলতে পারবো না। তবে তাজ মিয়ার সাথে যে তাদের মারামারি হয়েছে সেটা শুনেছি। পরে শুনি যে, তাজ মিয়া মারা গেছেন। এটা তদন্তের বিষয়৷ তদন্ত করে যারা দোষী হবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি’।
দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এমন কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিহত তাজ মিয়ার বাড়িতে যাচ্ছি। নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। আইনী তদন্ত চলছে’।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে নিহতের বাড়িতে গিয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আশা করছি তদন্তে সত্য ঘটনার উন্মেষ ঘটবে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি’।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখ বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টায় মাছ ধরার ছাই পাতানো নিয়ে কাবিলাখাই গ্রামের মার্কেটের সামনে একই গ্রামের মৃত বশিদ আলীর ছেলে রুহুল আমীন (২৬), আমরিয়া গ্রামের মৃত আফসোছ মিয়ার ছেলে আনছার মিয়া (৪৫), শুকুর মিয়ার ছেলে নূরুজ্জামান (২৫) ও কামরুজ্জামান (২৩)’র সাথে কথা কাটাকাটি হয় নিহত তাজ মিয়ার.পরে তা মারামারিতে রূপ নেয়। এ সময় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তাজ মিয়া। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাজ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :