এলাচি আক্তারঃঃ বলছি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মনসুর রহমান এর কথা।ড.মোহাম্মদ মনসুর রহমান ১৯৭৩ সালে আলহাজ্ব মোহাম্মদ ভুলু প্রামাণিক ও আলহাজ্বা হামিদা বেগম দম্পতি’র ঘর আলোকিত করে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলার অন্তর্গত বালিয়া উচ্চবিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৮৮ সালে প্রথম বিভাগে এস এস সি পাশ করেন৷ ১৯৯০ সালে টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত মির্জাপুর সরকারি কলেজ হতে প্রথম বিভাগে এইচ এস সি পাশ করেন। এইচ এস সি তে তিনি কলেজের তৎকালীন রেকর্ড পূর্ণ ফলাফল করেন। ছোটবেলা থেকেই গনিতের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিলো। এইচ এস সি পাশের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগে ভর্তি হোন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগ হতে তিনি প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।অনার্স ও সাবসিডিয়ারী সমন্বিত পরীক্ষায় বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, ফার্মেসি অনুষদ সমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য অত্যন্ত সম্মানসূচক “রাজা কালি নারায়ণ স্কলারশিপ ” এবং “বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন স্কলারশিপ ” লাভ করেন।
পরবর্তীতে তিনি একই বিভাগ হতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। অসাধারণ ফলাফলের জন্য তিনি “আশা লতা সেন” স্বর্ণ পদকে ভূষিত হোন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ফ্লুইড ডায়নামিকস এর উপর প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুস সাত্তারের অধীনে গবেষণা করেন। ছাত্রজীবন হতেই তার বাসনা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার। সে স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নেয় ১৯৯৯ সালের ১৫ মে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ নির্ভর করে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে স্বচ্ছ ও মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান থাকার মাধ্যমে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সৃজনের আনন্দ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন, তার অভিনব পড়ার কৌশল এবং উত্তম আচরণের ও বিচক্ষণতায়। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ছাত্রছাত্রী ও সহপাঠীদের খুব-ই প্রিয় ব্যক্তি রুপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় হতে পি এইচ ডি করার জন্য পোষ্টগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ অর্জন করেন। একই সময়ে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ এর জন্য মনোনীত হোন।বিখ্যাত গণিতবিদ প্রফেসর ডেভিড ফার্ন এর তত্বাবধানে তিনি “ইভুলোশন এন্ড স্টেবিলিটি অফ নন লিনিয়ার মিন ফিল্ড ডায়নামোস” এর উপর সাফল্যের সাথে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সে সময়ে তিনি আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের ছাত্রছাত্রীদের টিউটেরিয়াল ক্লাস নেওয়া সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে ও জড়িত ছিলেন। তিনি গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রী ও স্টাফ কমিটির মেম্বার নির্বাচিত হোন৷ তিনি “বাংলা সেন্টার ইন স্কটল্যান্ড ” এর সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচিত হোন। পশ্চিমা বিশ্বে বাঙালি সংস্কৃতি বাংলার ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে ও অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন৷২০০৩ সালে যুক্তরাজ্য হতে উচ্চতর ডিগ্রি শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং তার কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগে যোগদান করে শিক্ষা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। ২০০৫ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পান। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের, পি এইচ ডি ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা থিসিস নিয়মিত তত্বাবধান করেন। গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য ২০০৭ সালে তিনি ওমানের সুলতান কাবুস ইউনিভার্সিটি র গনিত বিভাগ হতে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসাবে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রিত হোন। পরবর্তীতে সেখানে ফুল ফ্যাকাল্টি হিসাবে যোগদান করার আমন্ত্রণ পান। ২০০৮ সালে তিনি সেখানে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকে একাডেমিক ফিল্ডে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণায় অনবদ্য অবদান রেখে চলেছেন৷ অসাধারণ গবেষণা ও শিক্ষকতার জন্য তিনি একাধিকবার শ্রেষ্ঠ গবেষক (২০১২,২০১৬) এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের (২০১৮) সম্মান অর্জন করেছেন।একই সাথে শ্রেষ্ঠ গবেষক ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সম্মান অর্জন একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এছাড়া ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তিনি বিভিন্ন পুরষ্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।২০২০ সালের ২৯ জুন তিনি অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন।তার প্রতিষ্ঠিত রিসার্চ গ্রুপ “মডেলিং অফ নানো ফ্লুইড ফ্লোস” ২০১৯ সালের সুলতান কাবুস ইউনিভার্সিটি র মোস্ট এক্টিভ রিসার্চ গ্রুপের মর্যাদা অর্জন করেন। ফলিত গনিতের উপর এর উপর এ পর্যন্ত তার ২০০ টি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে৷তার গবেষণা কর্ম বাস্তবধর্মী এবং উচ্চমানের বিধায় সারা বিশ্বের গবেষকবৃন্দ রেফারেন্স হিসেবে তা ব্যবহার করে থাকেন।বর্তমানে তার মোট গুগল সাইটেশন ৩২০০ এর অধিক এবং এইচ ইন্ডেক্স ৩৩ যা একজন শীর্ষ গবেষক পরিচায়ক।একজন গবেষক তার গবেষণা কর্মের জন্য অপর একজন গবেষকের কোনো একটি গবেষণা পত্রকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করাকে উক্ত গবেষণা পত্রের সাইটেশন বলে। অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বের ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৩ জন সেরা বিজ্ঞানী র মধ্য থেকে শীর্ষ ২% বিজ্ঞানী র এক তালিকা প্রকাশ করেছেন। এই শীর্ষ তালিকায় প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মনসুর রহমান অন্যতম। এ অর্জন বাংলাদেশের জন্য অতীব গৌরবের বিষয়। তার গবেষণা কর্ম বিশেষ করে ন্যানো ফ্লুইডের উন্নয়ন এর সাহায্যে তাপ ও ভর পরিমাপে ও বিভিন্ন মাধ্যমে জৈব রসের প্রবাহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিকাশে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে।সরাসরি তার তত্বাবধানে ১ জন পোস্ট ডক্টরোলার , ৬ জন পিএইচডি(২ জন চলতি) এবং ১৬ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। তার ৩ জন প্রাক্তন পিএইচডির ছাত্র (ড.মোঃ শরিফুল আলম, ড. মোঃ জসিম উদ্দীন, ড. খামিছ আল- কালবানী) এখন যথাক্রমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সোহার ইউনিভার্সিটি তে শিক্ষক ও প্রফেসর হিসাবে কর্মরত আছেন। শিক্ষা বিস্তার ও গবেষণার জন্য তিনি ইউ এস এ, ইউ কে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন সহ অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন৷ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মনসুর রহমান আন্তর্জাতিক জার্নাল ” ম্যাথম্যাটিকাল মডেলিং ইন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবলেম ” এর প্রধান সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি সুলতান কাবুস ইউনিভার্সিটি ” জার্নাল ফর সায়েন্স” এর একজন সহকারী সম্পাদক, এছাড়াও একাধিক আন্তর্জাতিক জার্নালের সম্পাদকীয় পরিষদের সদস্য এবং প্রায় ৫০ টির ও অধিক আন্তর্জাতিক জার্নালের রিভিউয়ার হিসাবে ও দায়িত্বরত আছেন৷ তিনি বাংলাদেশ গনিত সমিতি, কলকাতা গনিত সমিতি, অস্ট্রেলিয়ান ফ্লুইড মেকানিক্স সোসাইটি এবং আমেরিকান সোসাইটি ফর ফ্লুইড ইঞ্জিনিয়ারস এর মেম্বার হিসাবে সংযুক্ত আছেন৷ শিক্ষা ও গবেষণায় অনবদ্য অবদান রাখার পাশাপাশি তিনি সামাজিক, ধর্মীয় ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত। সম্প্রতি তিনি তার বাবা ও মায়ের নামে
“ভুলু হামিদা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ” নামে একটি জনকল্যাণমূলক ট্রাস্ট গঠন করেছেন৷ এ ট্রাস্টের মাধ্যমে তিনি গরীব ও মেধাবী ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা, স্কলারশিপ অর্জন, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও তার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন৷ তার সাথে কথা বলে জানা যায় পরবর্তীতে তিনি “ভুলু হামিদা ইন্সটিটিউশন ” নামে এতিম অনাথ শিশুদের জন্য অনাথ আশ্রম ও অসহায় বৃদ্ধা মা বাবা দের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম বানাতে চান৷ একই সাথে শিক্ষা ও গবেষণা এবং সমাজ সংস্কারে কাজ করে যেতে চান। দেশের মেধাবী ও শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে স্যারের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি।
আপনার মতামত লিখুন :